মুসলিম বিবাহে কুফু বা সমতা বিধানের গুরুত্ব
বিয়েতে সমতা বিধান কেন প্রয়োজন
মুসলিম বিয়েতে সমতা বিধানকে আরবিতে ‘কুফু’ বলা হয়। ‘কুফু’র গুরুত্ব সম্পর্কে ইসলামের জবাব সুস্পষ্ট ও যুক্তিভিত্তিক। ‘কুফু’ মানে ‘সমতা ও সাদৃশ্য’। অন্য কথায়, বর ও কনের ‘সমান-সমান হওয়া’, একের সঙ্গে অন্যজনের সামঞ্জস্য হওয়া।
ভিন্ন পরিবারে -খান্দানে ও বংশ-গোত্রে প্রীতিবন্ধনের এক চমৎকার ব্যবস্থা নর-নারীর এই শরিয়তি সম্মিলন যা সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি, যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
ব্যক্তিজীবনের শৃংখলা, ব্যক্তির মানসিক ও দৈহিক সুস্থতা এবং ধৈর্য, সাহসিকতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণাবলিসহ তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশসাধনে বিবাহের ভূমিকা অভাবনীয়।
বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল স্বামী-স্ত্রীর মনের প্রশান্তি, উভয়ের মিলের পথে বাধা বা অন্য যে কোন অসুবিধা সৃষ্টির কারণ না ঘটানোর ব্যবস্থা।
মানব প্রজন্মের সুরক্ষা ও সুস্থ পরিবার গঠন এবং সামাজিক শান্তি-শৃংখলার জন্য বিয়ে এক নির্বিকল্প ব্যবস্থা ও এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। তোমার রব সর্বশক্তিমান। সূরা আল ফোরকান আয়াত ৫৪।
বিয়ে করা শুধু মহানবি মুহাম্মদ (দ:) ﷺ-এর সুন্নাহই নয়; বরং তা অন্যান্য নবিগণেরও সুন্নাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন:
আমি আপনার পূর্বে অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান দিয়েছি। ১৩। সূরা রাদ, আয়াত ৩৮।
রাসুলুল্লাহ(দ:) ﷺ বলেন :
আমি (নফল) সিয়াম(রোজা) রাখি এবং সিয়াম ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। (বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ৩৪৬৯) অনলাইন বাংলা হাদীস।
বিয়েতে দেহ ও মনের শান্তি- প্রশান্তির অন্তরালে ঝগড়া-বিবাদ, দাম্পত্য কলহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম বড় কারণ হলো, বিয়ের সময় ‘কুফু আইন’ না মানা এবং ব্যক্তি জীবনে ইসলামী অনুশাসন না মানা।
পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. উবায়েদ আহমেদ খান ও গবেষক হাফিজ নাকিব -এর প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন- ‘‘এই (কুফু) আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো সফল বিবাহ এবং মনস্তাত্ত্বিক ভারসাম্য রক্ষার উদ্দেশ্যে সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে সমতা বিধান নিশ্চিত করা। মুসলিম সামাজিক মূল্যবোধে সামঞ্জস্যের আইন (কুফু) একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন।‘‘
সূখী দাম্পত্য জীবন নিজের মনমতো হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, তবে অমিল কতখানি তা খেয়াল রেখে তা বদলাতে হবে অথবা আপন সংসারকে মানিয়ে নিতে হবে দূ‘জনার।
মনের কষ্টকর অনিচ্ছার পরিবর্তনের দৈর্য্যই বৈবাহিক জীবনের সুখ; কেবল স্বামী-স্ত্রীর মনমানসিকতা ও আচার-আচরণের ওপরই নির্ভর করে। কুফু আইনের অনুশীলন বিয়েকে সফল করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। দাম্পত্য জীবনের শান্তি অনেক ক্ষেত্রে বহু প্রচেষ্টা, আপস এবং ত্যাগের ও।
কুফু আইন মানার পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনে স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক এবং একে অপরের পোশাকস্বরূপ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, ‘তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোশাকস্বরূপ। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)