বাংলাদেশে ইউনূস সরকারের ১০০ দিন
"ইউনূস সরকারের ১০০ দিন" একটি বিশেষ রাজনৈতিক প্রতিবেদন: বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা তার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের আলোচনা-সমালোচনা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। অত:পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও আজ (১৬ নভেম্বর) ১০০ দিন পূর্ণ ।
এই সরকার ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ জন্য ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্তে প্রশংসা থাকলেও নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ এই অন্তরিন সরকার।
গেল ১০০ দিনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, মব সহিংসতা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবিসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ। কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে
একাধিক উপদেষ্টা নিয়োগ ও দফতর বণ্টন:-
৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টাসহ ১৬ জন উপদেষ্টা নিয়োগে তিন দফায় শপথ নেন ১৬ জন এবং দ্বিতীয় আরও চারজন; সর্বশেষ ১০ নভেম্বর আরও তিনজন শপথ নিলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ
আওয়ামী লীগ - জাতীয় পার্টিসহ সাবেক সরকারের সুবিধাভোগী দলগুলো বাদে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠক করেছেন সরকার। ভবিষ্যতে ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের সংলাপ অব্যাহত থাকবে।
প্রশাসনের নিয়োগ পদায়ন পদোন্নতি
প্রভাবশালী আমলাদের বাধ্যতামূলক অবসর, পদচ্যুত, চুক্তি নিয়োগ বাতিলসহ, কাউকে কাউকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারদের পরিবর্তনসহ বিগত ১৬ বছর বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন
প্রথম দফায় ৬টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে
সংবিধান সংস্কার কমিশন,
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন,
পুলিশ সংস্কার কমিশন,
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন,
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন ও
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
পরে সরকার আরও ৪টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়। এগুলো হলো- স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন,
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন,
শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
এছাড়া ও গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি গঠন করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একাধিক টাস্কফোর্সও।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিশনগুলো তাদের বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সুপারিশ পেশ করবে।
ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা নিয়ে বিচার কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
বিচার বিভাগ পুনর্গঠন
বিচার বিভাগেও বড় ধরনের পরিবর্তন । নতুন বিচারপতি নিযুক্ত হন আপিল বিভাগের বিচারক সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আপিল বিভাগে নতুন আরও চার বিচারপতিকে নিয়োগসহ হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গেল সরকারের নিয়োগ পাওয়া ১২ বিচারপতিকে মুখে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়।
‘মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। কিন্তু সরকার পতনের একদিন পরেই রাষ্ট্রপতি সাজা মওকুফ করায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মুক্তি দেওয়া হয়েছে কোটা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলাকালে গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের। সাথে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ও কারাবন্দি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মীদের ও।
সুবিধাভূক্ত জাতীয় আট দিবস বাতিল
আওয়ামী লীগের দলীয় দিবস বলে পরিচিত আটটি জাতীয় দিবস বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দিবসগুলো হলো— ঐতিহাসিক ৭ মার্চ,
১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস,
৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী,
৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী,
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস,
১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস,
৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও
১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ
মহামান্য রাষ্ট্রপতির বক্তব্য হলো, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে, সেগুলোর উত্তর আপিল বিভাগের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।’
আটক সাবেক এমপি-মন্ত্রী
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাবেক সরকারের এমপি-মন্ত্রী, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা আমলাদের গ্রেফতার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, শাহাজান খান, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আহমদ হোসেন, সাধন চন্দ্র মজুমদার, আব্দুস সোবহান গোলাপ, আ স ম ফিরোজ, জুনাইদ আহমেদ পলক, হাজী মো. সেলিম, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, আসাদুজ্জামান নূর, নুরুল ইসলাম সুজন, ফরহাদ হোসেন, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, টিপু মুনশি, দীপু মনিসহ বেশ কয়েকজন সাবেক এমপি-মন্ত্রী।
জাতীয় পার্টির কয়েকজন সাবেক এমপি-মন্ত্রীও আটক হয়েছেন।এ ছাড়া ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সচিব জাহাংগীর আলম, হেলালুদ্দীন আহমেদসহ, অনেকে গ্রফতার হয়েছেন।
সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ
আওয়ামী লীগ সহায়ক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িতসহ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ক্ষমতাবলে, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। গত ২৩ অক্টোবর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করে প্রজ্ঞাপন ।
দ্রব্যমূল্যের লাগামে ব্যর্থতা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাল, তেল, ডিম, পেঁয়াজসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপণের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার অনুকূলে রাখতে পারেনি। মুরগি এবং সবজির দামও বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। আমদানি পণ্যের শুল্ক কমানোতেও খুব একটা প্রভাব পড়েনি বাজারে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস সাধারণ জনতার।