বসন্তের আগমনে বাঙালি প্রকৃতি
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। নানান ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমেই প্রতি দুই মাস পর পর ঋতু আসে। এই ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে আমাদের সকল প্রকার জীবনে। প্রতিটা ঋতুই রয়েছে নিজস্ব সৌন্দর্য, রূপ ও ধারা প্রকৃতি।
আবহমান বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যের প্রধান ও শেষ ঋতু বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্তকাল। বঙ্গাব্দের শেষ দুই মাস ফাল্গুন ও চৈত্র মিলিয়ে বসন্ত ঋতু।
প্রতিটি জাতির সংস্কৃতি গড়ে ওঠে তাদের জাতীয় জীবনের মান আর বিনোদনের ভিত্তিতেই। জাতির পরিচয় তুলে ধরা সংস্কৃতি প্রকৃতির সাথে মিশে একাকার হয়ে প্রাণের দৃঢ়তায় পৃথিবীর সকল বন্ধনকে ছাড়িয়ে যায়। বাংলা ও বাঙালির প্রাণ সত্ত্বায় মিশে আছে ঋতুরাজ বসন্ত।
ফাল্গুনের অনুরাগী মাতাল হাওয়ার দোলা প্রকৃতিতে দোলছে বাংলার নিস্বর্গ প্রকৃতি। নবরূপে প্রকৃতিকে সাজাবে ঋতুরাজ বসন্ত। ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্ত, যৌবনের উন্মাদয় বয়ে আনার বসন্ত আর আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় মন-প্রাণ কেড়ে নেওয়া আর প্রকৃতিতে হারিয়ে যাওয়া প্রথম দিন আজ পহেলা ফাগুন।
প্রকৃতির জীবনকে রঙিন ও মধুময় করে ভাবতে শিখা বসন্তকাল বৃহৎ কল্পনা ও স্বপ্নের জন্ম দেয়।মনে জাগে কত কথা, কত গান— ‘আজি এ বসন্ত সমীরণে/কত কথা মোর মনে পড়ে।’
দখিনা মিঠে বায়ের মৃদুদোলা দেহ ও মনের ক্লান্তি জুড়ায়। প্রাণকে চঞ্চল করে তোলে বসন্তের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। নবজাগরণের দোলা লেগে বাংলার প্রকৃতি যেমন শিহরিত হয়ে কোন অজানা সুরের প্রত্যাশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে বাঙালির হৃদয়।
ফাগুনের প্রকৃতিতে মিশে যাওয়া পথিকের হৃদয়ে উদাসীন সুরে হৃদয় পাগল করা এ বাংলার নবরূপ শুধুই বাংলার।
বাংলার প্রকৃতি, ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বড় স্থান দখল করে আছে বসন্ত। বসন্ত যেমনি মিলনের ঋতু, আবার বিরহেরও ঋতু। কনকনে শীতের জবুথবু প্রকৃতির অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ সমীরণের প্রবাহ শুরু হয় বসন্তে, সাথে দোলায়িত হয় মানবের মনও। আসে জীবনে এক মহা পরিবর্তন । হৃদয়ে সৃষ্টি হয় প্রণোদনা, নাড়া দেয় এক অব্যক্ত আবহ ও মোহ। বসন্তের হাওয়া দোলা দেয় মানব হ্দয়ের মণি কোটাই। বৃক্ষরাজি, পক্ষী ও সকল প্রাণিকুলে ।
বসন্তের ফাগুন শুধু অশোক-পলাশ-শিমুলেই উল্লাস-উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্ত রঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপরও রং ছড়ায়। শুরু হয় উষার এক রাঙা প্রভাতের পুষ্পিত রক্তিম স্মৃতি।
১৯৫২ সালের আট-ই ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের রক্তিম স্মৃতি।